পলাশ পাল নেত্রকোনা জেলা প্রতিনিধি
মাত্র ছয় মাস আগে বিয়ে করেছিলেন নেত্রকোনার জয় মিয়া আর পাশের গ্রামের মারজিয়া সুলতানা। আর্থিক অনটন লাঘবে চাকরির আশায় ১৫ দিন আগে গ্রাম ছেড়ে ঢাকায় এসেছিলেন এই নব দম্পতি। এক সপ্তাহের মধ্যে পোশাক কারখানায় চাকরিও জুটেছিল। নতুন জায়গায় স্থায়ী হতে না হতেই সবকিছু শেষ হয়ে গেল তাঁদের।
জয় আর মারজিয়া আজ পাশাপাশি শুয়ে আছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মর্গে। আগুনে তাঁদের দেহ এতটাই পুড়েছে যে, চেনার উপায় নেই। পরনের প্যান্ট আর মাথার ক্লিপ দেখে তাঁদের মরদেহ শনাক্ত করতে হয় স্বজনদের।
নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলার জয় ও মারজিয়া বিয়ের পর কিছুদিন গ্রামে ছিলেন। কিন্তু আর্থিক অনটনে বসে থেকে তো সংসার চলে না। তাই দুজনে মিলে সিদ্ধান্ত নেন, ঢাকায় গিয়ে কাজ করবেন। এক সপ্তাহ আগে মিরপুরের শিয়ালবাড়ি এলাকায় একটি পোশাক কারখানায় যোগ দেন তাঁরা। কিন্তু গত মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) সেই কর্মস্থলে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ভয়াবহ দগ্ধ হন দুজনে। জয়ের বাবা সবুর মিয়া ও মারজিয়ার বাবা সুলতান লাশ শনাক্ত করেন। বুধবার (১৫ অক্টোবর) দুপুরে লাশ বুঝে নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তাঁরা। সে সময় তাঁদের সঙ্গে কথা হয় গণমাধ্যমের।
সবুর মিয়া কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘বিয়ের পর ওরা গ্রামেই ছিল। কিন্তু বসে থেকে খেলে তো সংসার চলে না। আমি মেয়ের বাবাকে বলেছিলাম, ঢাকায় নিয়ে গিয়ে কিছু একটা কাজ দেন। ১৫ দিন আগে ওরা ঢাকায় আসে। এখন লাশ নিয়েই ফিরব।’
সবুর মিয়া বলেন, ‘রাতেই হাসপাতালে এসেছিলাম, কিন্তু চিনতে পারিনি। সকালে এক এক করে লাশ দেখতে গিয়ে ছেলের প্যান্ট, বউমার জামা আর মাথার ক্লিপ দেখে বুঝি—ওরা আমাদের সন্তান। আল্লাহ এমন দুঃখ যেন আর কারও কপালে না দেন।’
মারজিয়ার বাবা সুলতান পেশায় পরিচ্ছন্নতাকর্মী। ঢামেক হাসপাতালের মর্গের সামনে বসে চোখ মুছতে মুছতে তিনি বলেন, ‘ওরা ঢাকায় আসার পর আমি গার্মেন্টসে চাকরি জোগাড় করে দিই। জামাই অপারেটর, মেয়ে সাহায্যকারী হিসেবে কাজ নিয়েছিল।’
গত মঙ্গলবার দুপুরে মিরপুরে শিয়ালবাড়ির ৩ নম্বর সড়কের একটি রাসায়নিক গুদামে আগুন লাগে। গুদামে বিস্ফোরণের পর আগুন ছড়িয়ে পড়ে পাশের চারতলা ভবনে। পরে ভবনের দোতলা ও তিনতলা থেকে ১৬টি লাশ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস। নিহত ব্যক্তিদের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ঢামেক হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।