
মোহাম্মদ সিরাজুল মনির চট্টগ্রাম ব্যুরো
জলাই অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে অর্থনৈতিক ঝুঁকিতে রয়েছে দেশ। সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মান নিচে নেমে গেছে। এটা থেকে উত্তরণের উপায় খুজতেছে অর্থনীতিবিদরা কিন্তু কোন লাভ হচ্ছে না। দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা না থাকলে এবং গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থা যদি চর্চা না হয় উভয় সংকটে পড়ে যাবে দেশ। গত এক বছরে ক্যাশের অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে শুধুমাত্র আর্থিক সংকটে। বন্ধ হয়ে যাওয়া শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিক পক্ষ ব্যাংক লোনের কবলে পড়ে গেছে অনেকটাই। লোন পরিশোধ না হওয়াতে একদিকে যেমন শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে অন্যদিকে আর্থিক সংকটে পড়ে গেছে ব্যাংকগুলো। আর্থিক সংকটের পাশাপাশি বেকারত্বের হার বেড়ে গেছে অনেকাংশে। নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি না হওয়াতে এ অবস্থা আরো ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে আগামী কিছুদিনের মধ্যে। শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো চালু করার ব্যবস্থা না করলে আগামী এক বছরে দেশে বেকারত্বের হার বেড়ে যাবে তিন গুণ।
ব্যাংকগুলো উপর দিকে ঠিক থাকলেও ভেতরে অবস্থা খারাপ গ্রাহকদের স্থায়ী আমানত ঠিকমতো ফেরত দিতে পারতেছে না আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। গ্রাহকরা ব্যাংক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে অনেক আগে থেকেই। বিশেষ করে চট্টগ্রামের স্বনামধন্য ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান এস আলম গ্রুপের মালিকানায় থাকা কয়েকটি ব্যাংকের টাকা ফেরত পাচ্ছে না গ্রাহকরা। নিজের টাকা নিজে ব্যাংক থেকে তুলতে পারতেছে না বলে গ্রাহকদের অভিমত। জুলাই অভ্যুত্থান পরবর্তী আলম গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল আলম মাসুদ সিঙ্গাপুরে পালিয়ে থাকার কারণে বাংলাদেশে তার লোনের পরিমাণ বেশি থাকায় গ্রুপ সংশ্লিষ্ট ব্যানগুলো থেকে গ্রাহকদের টাকা দেয়া অনেকটা নিষেধ করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এক লক্ষ টাকার চেক নিয়ে ব্যাংকগুলোতে গেলে পাঁচ হাজার টাকা ধরিয়ে দিচ্ছে এরকম অবস্থা। এ নিয়ে ব্যাংক ম্যানেজারের সাথে গ্রাহকদের হাতাহাতি পর্যন্ত হচ্ছে বিভিন্ন শাখায়।
অন্তবর্তী সরকার একটি রাজনৈতিক স্থিতিশীল সরকার গঠন করতে ত্রয়োদশ নির্বাচনের আয়োজন করেছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা সেজন্য নির্বাচন কমিশন একটি রোডম্যাপ ঘোষণাও করেছে। কিন্তু নির্বাচন হওয়ার নিশ্চয়তা কতটুকু তা এখনো সবার মাঝে প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সরকার ব্যবস্থার কোন বিকল্প নাই। তাই সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী এবং রাজনীতিবিদরা জাতীয় সংসদ নির্বাচন কে প্রাধান্য দিয়ে ইতিমধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছে। আশঙ্কা থাকলেও ফেব্রুয়ারিতেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এটাই অন্তবর্তী সরকার প্রদানের ঘোষণা।
সংশ্লিষ্টদের অভিমত এভাবে বিভিন্ন সংকট নিয়ে একটা সরকার এবং দেশ পরিচালনা হতে পারে না। শুধুমাত্র রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আসলেই দেশের অর্থনৈতিক সংকট থেকে মুক্তি মিলতে পারে। দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো সঠিকভাবে কাজ করতে পারতেছে না শুধুমাত্র স্থিতিশীলতার অভাবে। আমানতকারীদের রাস্তা ফিরিয়ে আনতে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সময় লাগতে পারে বলে অভিমত অর্থনীতিবিদদের। তবে এই সংকট কাটিয়ে উঠতে বেশ কিছুদিন সময় লেগে যেতে পারে। ব্যাংকারদের মতে মাঠ পর্যায়ে গ্রাহক রা ব্যাংকের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলেছে হয়তো ব্যবসায়ীরা বাধ্য হয়ে প্রতিষ্ঠানের কারণে ব্যাংকের লেনদেন করতে হচ্ছে কিন্তু সাধারণ গ্রাহকরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে অনেক ব্যাংক থেকে যা ফিরিয়ে আনা খুব কষ্টসাধ্য বিষয়। গ্রাহকদের আস্তা অর্জন করতে হলে স্বচ্ছ সেবার পাশাপাশি সঠিক সময়ে আমানত ফিরিয়ে দেয়ার নিশ্চয়তা দিতে হবে। তাহলে হয়তো কিছুটা স্বস্তিতে ফিরবে ব্যাংকগুলো।