
মোঃ সিরাজুল মনির চট্টগ্রাম ব্যুরো
জুলাই অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক দলের কর্মকান্ড এবং সরকারের উদাসীনতার কারণে সাধারণ জনগণের মাঝে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। আগের স্বৈরাচারী সরকারের বিভিন্ন অনিয়ম এবং দুর্নীতির কারণে সাধারণ মানুষের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছিল। সেই ক্ষোভ থেকে ভয়াবহ আন্দোলনের রূপ নিয়েছিল ২০২৪ সালে। ভয়াবহ দুর্নীতির করাল গ্রাস থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য ছাত্র-জনতা আন্দোলনে নেমে সফল হয়েছিল। কিন্তু দেশের আমলাতান্ত্রিক জটিলতা থেকে এখনো বের হয়ে আসতে পারেনি সরকার ও জনগণ। দুর্নীতির থাবা থেকে কোনমতে মুক্ত হতে পারছে না দেশের সকল প্রতিষ্ঠান। এক প্রকারের লোভী কিছু আমলার কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে পুরো প্রশাসন।

প্রশাসনিক প্রক্রিয়া নৈতিকতা হারিয়েছে অনেক আগেই। বর্তমান সরকার এসব বিষয়ে শক্ত অবস্থান নিতে না পারায় জনগণের আস্থা হারিয়ে ফেলেছে অনেকটাই।
দেশে এখন বইছে নির্বাচনী হওয়া। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে গেল। জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার আগে বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক ও প্রতিনিধিদের এই নির্বাচন জনগণকে অনেকটা ভাবিয়ে তুলেছে। নির্বাচনী ব্যবস্থা এবং ফলাফল নিয়ে যে ধরনের তামাশা হয়ে গেল তাতে সাধারণ ভোটাররা শঙ্কিত। বিশেষ করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচনী ফলাফল কে কেন্দ্র করে যে দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হল সেটা আগামী জাতীয় নির্বাচন বিষয়ে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। যদিও সরকার এবং নির্বাচন কমিশন সাধারণ ভোটারদের আশ্বস্ত করার চেষ্টা করতেছে যে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে কোন প্রকারের হুমকি নেই এবং নিরপেক্ষ একটি নির্বাচন উপহার দিবে জাতিকে নির্বাচন কমিশন ও সরকার। কিন্তু বর্তমান অন্তবর্তী সরকারের সার্বিক কর্মকাণ্ড বিবেচনা করে এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির যথেষ্ট অবনতি হওয়ায় সাধারণ ভোটাররা আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে এখনি ভাবতে শুরু করেছে।
এদিকে রাজনৈতিক দলগুলোর একে অপরের প্রতি হিংসামূলক বক্তব্য এবং বিরুদ্ধাচরণ দেখে সাধারণ মানুষ উভয় সংকটে পড়ে গেছে। রাজনৈতিক দলগুলো আসলে কি চাই তা স্পষ্ট হয়ে উঠছে না তাদের বক্তব্যের মাধ্যমে। সবাই শুধু ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে কিভাবে নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করবে তা নিয়েই তাদের রাজনৈতিক প্রোগ্রাম গুলো সব সময় সোচ্চার থাকে। এর মাঝখানে পড়ে গেছে সাধারণ জনগণ। সরকারি কর্মকান্ড এবং রাজনৈতিক দলগুলোর আচরণ দেখে সাধারণ জনগণের মাঝে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। কারো কর্মকাণ্ডে জনগণ সন্তুষ্ট হতে পারছে না। সরকারি বিভিন্ন অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয় কেন্দ্রিক দুর্নীতির ধারাবাহিক চিত্র সাধারন মানুষকে চিন্তিত করে তুলেছে। এক বুক আশা নিয়ে সাধারণ জনতা গুলির সামনে বুক পেতে দিয়ে আন্দোলন করেছে এমন বাংলাদেশ দেখার জন্য নয়। স্বৈরাচারী ফ্যাসিবাদীরা এখনো মাঠে সোচ্চার রয়েছে এটা আন্দোলনকারীদের আরো ভাবিয়ে তুলেছে কারণ কোন কারনে ফ্যাসিবাদীরা ফিরে আসলে যারা আন্দোলনের সময় মাঠে ছিল তাদের কি গতি হবে সেটা নিয়ে সবাই চিন্তিত। স্বৈরাচারী সরকারের বিভিন্ন সংগঠন নিষিদ্ধ হলেও তারা প্রশাসনের নাকের ডগায় হঠাৎ হঠাৎ মিছিল নিয়ে বের হয়ে যাচ্ছে এবং এগুলোর বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না থাকায় আমজনতা প্রশাসনের উপর বিরক্ত। প্রতিবাদের জায়গা থেকে সাধারণ মানুষ কোন সারা শব্দ পাচ্ছে না এখনো যে যেমন ইচ্ছে করতেছে তেমন করে প্রশাসন চালাচ্ছে। বিভিন্ন জায়গায় স্থবির হয়ে পড়েছে প্রশাসনিক কর্মকান্ড। সরকারের উপদেষ্টারা রুটিন কাজ ছাড়া তেমন কোন সিদ্ধান্ত দিয়ে কাজ আদায় করতে পারছে না আমলাদের কাছ থেকে এবং এটাই হলো ভাবনাচিন্তার বিষয়। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা থেকে প্রশাসন যতক্ষণ বের হতে পারবে না ততক্ষণ সাধারণ মানুষ স্বস্তি পাবে না।
রাজনীতি হলো জনগণের জন্য আর যখন সেই রাজনীতির জনগণের উপর অন্ধকার বয়ে আনে তখন সাধারণ মানুষের আর কোথাও যাওয়ার রাস্তা থাকে না। দেশের রাজনীতিবিদরা কিভাবে রাষ্ট্র ক্ষমতায় যাবে এখন সেটা নিয়ে চিন্তিত তাই জনগণ বর্তমান রাজনৈতিক দলগুলোর উপরেও আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। তবুও সাধারণ মানুষ আশা রাখে উপযুক্ত এবং নিরপেক্ষ সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে একটি রাজনৈতিক সরকার গঠন করে দেশকে স্থিতিশীল করবে।