
মোঃ সিরাজুল মনির চট্টগ্রাম ব্যুরো
২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার আগে প্রথম নির্বাচন হল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন যা এখন টক অফ দা কান্ট্রিতে পরিণত হয়েছে। আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হওয়া ডাকসুর এই নির্বাচন রাজনৈতিক সমীকরণকে বদলে দিতে শুরু করেছে বলে অনেকের ধারণা। দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপি একটি অঙ্গ সংগঠন হলো ছাত্রদল যারা সবসময় ছাত্রদের নিয়ে কাজ করে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে আধিপত্য বিস্তারে সাংগঠনিক দক্ষতা দেখানোর চেষ্টা করে। দেশের আপামর জনসাধারণ এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা কিছুটা হলেও ধারণা করেছিল ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রদল বিজয়ী হয়ে আসবে যা আগামী জাতীয় নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে পারে। কিন্তু অনেকের ধারণা ভুল প্রমাণিত করে ছাত্রশিবির বিজয়ী হয়ে প্রমাণ করে দিল তাদের সাংগঠনিক দক্ষতা বৃদ্ধি পেয়েছে আগের থেকেও অনেক বেশি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং সাধারণ মানুষের ধারণা বিএনপি একটি জনপ্রিয় দল হলেও জুলাই অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে তাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডগুলো সাধারণ মানুষ গ্রহণ করতে পারেনি। বিশেষ করে দখল বাণিজ্য কমিটি বাণিজ্য এবং কিছু কিছু জায়গায় চাঁদাবাজিতে তারা খুবই পারদর্শী এবং সেটার ধারাবাহিকতার কারণে নির্বাচনগুলোতে শতভাগ প্রভাব পড়বে এটাই স্বাভাবিক। দীর্ঘ ১৫ বছর সাধারণ মানুষ ভোটের রাজনীতির বাইরে ছিল কিন্তু এখন একটা সুযোগ হলো মানুষের ভোট দিয়ে জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করার তাই ভোটারদের প্রতি মনোযোগী না হয়ে বিএনপি’র সিনিয়র নেতা থেকে শুরু করে সবাই কমিটি এবং পদবী নিয়ে ব্যস্ত রয়েছে। সাধারণ মানুষের কষ্ট হবে এরকম কোন কাজ করা থেকে বিএনপির নেতাকর্মীরা বিরত থাকছে না এটাই আগামীর নির্বাচনের জন্য বিপদ বয়ে আনবে বলে অনেকের ধারণা।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তার সকল বক্তব্যে একটা কথাই বলে থাকেন আগামী নির্বাচন হবে সবচাইতে কঠিন নির্বাচন তাই নেতাকর্মীদের শান্ত থেকে সাংগঠনিক কাজ পরিচালনা করার জন্য তিনি সবসময় আহ্বান জানান এবং সাধারণ মানুষের দ্বারে দ্বারে বিএনপির বার্তা পৌঁছে দেয়ার জন্য তিনি নেতা কর্মীদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু নেতা কর্মীরা তার নির্দেশনা অমান্য করে তাদের দখল বাণিজ্য এবং চাঁদাবাজিতে লিপ্ত রয়েছে যা দলকে ক্ষতি করতেছে সার্বক্ষণিকভাবে। দলীয় নেতাকর্মীদের এই অসংগঠনিক কর্মকান্ডের কারণে তারেক রহমান দেশে আসার জন্য সাহস করতে পারছে না এটাই অভিজ্ঞদের মতামত। যদিও তিনি দেশে এসে রাজনীতির হাল ধরলে দেশীয় রাজনীতির প্রেক্ষাপট বদলে যাবে। কিন্তু দলের বিবাদমান গ্রুপ সৃষ্টি হওয়ায় তার দেশে আসার চিন্তা শতভাগ কাজ করছে না। অনেকের ধারণা তারেক রহমান দেশে এসে দলীয় হাল ধরে রাজনীতি পরিচালনা করুক সেটা অনেক নেতৃবৃন্দ চাই না। এই কথাটা একেবারে ফেলে দেয়ার মত নয় কারণ তিনি দেশে এসে দলীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনা করলে অনেক হাইব্রিড নেতা হয়তো সুযোগ সুবিধা নিতে পারবে না।
বিএনপি’র হাতে এখনো অনেক সময় আছে সাংগঠনিক দক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি ঐক্যবদ্ধ রাজনীতি তাদেরকে জনসাধারণের কাতারে নিয়ে যেতে পারে। আর জনসাধারণের কাতারে যেতে না পারলে আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এর মাসুল দিতে হবে এটাই নিশ্চিত। কারণ আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাংলাদেশের জন্য একটি রোল মডেল হিসেবে দাঁড় করানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বর্তমান অন্তবর্তী সরকার। ছাত্র জনতা জুলাই অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশে একটি সংশোধনী আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। দুর্নীতি মুক্ত রাষ্ট্র গঠনে সবাই ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা পালন করবে এটাই জুলাই অভ্যুত্থানের ফর্মুলা। কিন্তু কিছু রাজনৈতিক দলের কর্মকান্ড অতীতের অনৈতিক কর্মকান্ডকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে তাই সাধারণ ভোটারদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে আগামী নির্বাচনের জন্য পথকে সুগম করতে হবে।
ডাকসু নির্বাচনের ছাত্রশিবির বিজয় হয়ে আসায় দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচন গুলোর দিকে ইঙ্গিত করছে কি হতে পারে। যেখানে রাজধানী এবং ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদল বিজয়ি হয়ে আসতে পারেনি সেখানে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের অবস্থান উভয় নড়বড়ে এবং এটা আগামী জাতীয় নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে এটা শতভাগ নিশ্চিত। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ও যদি ছাত্রশিবির নেতৃত্বে চলে আসে তাহলে ছাত্রদলের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিবে এটাই স্বাভাবিক। এত দীর্ঘ সময় ধরে ছাত্রদল তাহলে করলো কি তাদের সাংগঠনিক দুর্বলতা ছিল এটাই প্রমাণ করে বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক নির্বাচন গুলোতে। দেশের সকল পর্যায়ের উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্রদল সুযোগ কমিটি দিয়ে রেখেছে কিন্তু কার যত সাংগঠনিক কোন কাজে যুক্ত নাই বললেই চলে। সাংগঠনিক দক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এ সকল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের সাথে সোহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে।
আদর্শিক রাজনীতি থেকে বিএনপির নেতাকর্মীরা অনেক বাইরে চলে গেছে। আদর্শের বিচ্যুতি করলে সেটা সব সময় সাধারণ মানুষ গ্রহণ করতে পারে না। আর ক্ষমতায় বসতে গেলে সাধারণ মানুষের আঙ্গুলের চাপ জরুরী। সে আঙুলের ছাপ নিরপেক্ষভাবে আনতে গেলে সাধারণ মানুষের উপর জুলুম করা যাবে না। জুলুম এবং হিংসার রাজনীতি থেকে সরে আসতে পারলে বিএনপির জন্য সামনের দিনগুলো আশীর্বাদ হয়ে আসবে।